আম বাগান করার উপযুক্ত সময়

বাংলাদেশে  আবহাওয়া জানা যাই  আম বাগান করার উপযুক্ত সময় হলো বৈশাখ মাস থেকে আষাঢ় মাসের মধে শুরু করা । এই সময়ে জমিতে বৃষ্টির সংখ্যা বেশি হয়ে থাকে এবং তাপমাত্রা ২৫-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে । আম এর  জন্য কৃষিবিদরা জামি  পরিচয় অনুযায়ী নির্বাচন করে ।জামিতে জোরালো ও মাধ্যমিক আম গাছ রোপণ করতে পারেন। তারপর পরিচর্যা করা , সার বিতরণ এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত যত্ন নেওয়া । গাছের কন্ডিশন দেখে প্রয়োজোন  মতো পানি  দিতে হবে এবং রোগ প্রতিরোধে নিরাপদ রোগনাশক ব্যবহার করতে হবে।

আম চাষের জন্য উপযুক্ত জমি নির্বাচনঃ

দিন দিন বাড়ছে আমের চাষ। মানসম্পন্ন আম ফলাতে তাই দরকার আধুনিক কৌশল প্রক্রিয়া । ভালো আম চাষের জন্য চাষিদের যে বিষয় গুলো দরকার কীভাবে জমি নির্বাচন এবং রোপণ দূরত্ব, গর্ত তৈরি ও সার প্রয়োগ, রোপণ প্রণালী, রোপণের সময়, জাত নির্বাচন করা , চারা নির্বাচন করা , চারা রোপণ ও চারার পরিচর্যা করতে হয়। 

মাটি ও আবহাওয়াঃ

আমাদের বাংলাদেশে মাটির বিভিন্ন  আবহাওয়ার কারণে দেশের সব জেলাতে সব রকম  জাতের আম চাষ বেশি ভালো উতপাদন হয় না ফলে । এই জন্য আম চাষের জন্য মাটির আদ্রতা কোম দরকার হয় যেমন প্রায় ৫.৬-৭.৫। অনেক সময় দেখা দেয় যে পাহাড়ি ও বরিশাল বিভাগের অনেক জেলাতে বিভিন্ন আম চাষ হয় যেমন 

ফজলী, ল্যাংড়া, খিরসাপাত ও আশ্বিনা জাতগুলো বেশে ভাল হয়। সুতরাং কাঙ্ক্ষিত জাতটি নির্বাচিত জায়গায় সঠিক হবে কিনা তা বিবেচনা  দেখতে হবে । পানি সুনিষ্কাশিত,জমি গভীর, ও উর্বর দো-আঁশ মাটি আম চাষের জন্য উপযুক্ত জমি বিবেচনা করা হয়। জমিতে বর্ষায় পানি জমাট বাধে না ।এবং জমিতে পানি না দাঁড়ায় এমন উঁচু বা মাঝারী উঁচু এবং বর্ষায় পানি জমিতে জমে থাকে না এমন জমি নির্বাচন কোরতে হবে। ৩-৪ বার ভালো করে চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালো করে  সমতল জমি নির্বাচন এবং আগাছামুক্ত করে নিতে হবে । রোপণ দূরত্ব নির্ভর করে আমের বিভিন্ন  জাতের উপর।  দ্রবণীয় শীল আমের বিভিন্ন জাত বা বড় আকৃতির গাছ হলে সাধারণত ১৪ মিটার বা প্রায় ৩৫-৪০ ফুট দূরত্বে পর পর আমের চারা গাছ লাগাতে হবে । এই দূরত্বে অনুযায়ী আম গাছ নির্বাচন করে গাছ  লাগানো জাবে এক বিঘা জমিতে প্রায় ৯ -১০ টি আম গাছ লাগানো যাবে।

১ বিঘা জমিতে আম গাছ লাগানোর প্রসেস 

জমির পরিমান১ বিঘা
গাছের দূরত্ব১০ মিটার বা ৩৫ ফুট 
বিঘা জমিতে আম গাছ লাগানোর প্রসেস

প্রতি আম গাছের সার প্রয়োগ তালিকাঃ 

গোবর সার১০ কেজি 
টিএসপি সার৫০০ গ্রাম
এমপি সার২৫০ গ্রাম
জিপ সার২৫০ গ্রাম
জিংক সালফেট৫০ গ্রাম 
বোরিক এসিড১০ গ্রাম 
প্রতি আম গাছের সার প্রয়োগ তালিকা

১ বিঘা জমির তে ভালো আম গাছ হলে ৮-১০ মিটার বা ৩০-৩৫ ফুট দূরত্বে আম গাছ লাগানো যাবে এবংএই দূরত্ব অনুসরণ করলে এক বিঘা জমিতে মিনি মাম প্রায় ১০ থাকে ১৪  টি আম গাছ লাগানো যাই । খাটো কিছু আকৃতির আমের  কিছু কিছু জাত যেমন- বারি আম-৩ (আম্রপলি) হলে প্রায়  ৬-৮ মিটার দূরত্বে পোর পোর আম গাছ  লাগানো যাবে এবং এ দূরত্ব অনুসরণ করলে এক বিঘা জমিতে প্রায় ২০-২৫ টি আম এর  চারা গাছ লাগানো যাবে। বিভিন্নো জাতভেদে আম গাছের রোপণ দূরত্ব নিধারন করা হয় ৬×৬ মিটার; ১২×১২ মিটার, ১০×১০ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তাই আমের চারা রোপণ করা হোক না কেন, গাছ লাগানোর স্থানটি চিহ্নিত করে বর্ষা শুরুর আগেই সেখানে গর্ত করতে হবে। সাধারণত মে-জুন মাসে ৭০-১০০ সেন্টি মিটার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ ও গভীর রতায় গর্ত করে নিতে হবে । গর্ত করার সময় গর্তের মাটি আলাদা আলাদা  করে রাখ তে হবে যেমন উপরের অর্ধেক অংশের মাটি একপাশে এবং নিচের অংশের মাটি অন্যপাশে রাখতে হবে। গর্ত থেকে মাটি উঠানোর পর ১০ দিন পর্যন্ত গর্তটিকে রোদে শুকাতে হবে। এরপর প্রতি গর্তে ১০ কেজি গোবর সার, ৫০০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপি, ২৫০ গ্রাম জিপ সার, ৫০ গ্রাম  জিংক সালফেট এবং ১০ গ্রাম বোরিক এসিড মাটির সাথে মিশিয়ে মাটি ওলোট-পালোট করে গর্ত ভরাট করতে হবে। গর্ত ভরাটের সময় উপরের অর্ধেক অংশের মাটি দিয়ে গর্ত ভরাট না হলে প্রয়োজনে পাশ থেকে উপরের মাটি গর্তে ভিতর দিতে হবে। তবে গর্তের নিচের অংশের মাটি দিয়ে গর্ত  পরিপূর্ণ ভরাট করা যাবে না। 

চারা নির্বাচন করনঃ

সুস্থ-সবল ও রোগমুক্ত চারা রোপণ করলে ভালো ফলোন পাওয়া যাবে । রোপণের জন্য ৪-৫ ফুট উচ্চতা সম্পন্ন ১-৩টি ডাল বিশিষ্ট চারা নির্বাচন করতে হবে। ২-৩ বছর বয়সী ফাটল/ভিনিয়ার কলমের চারা বাগানে লাগানোর জন্য ভাল হয় । গর্ত ভর্তি করার ১০-১৫ দিন পর পুনরায় গর্তের মাটি ভালভাবে উলোট-পালোট করে গর্তের মাঝখানে চারাটি সোজাভাবে লাগিয়ে তারপর চারদিকে মাটি দিয়ে গাছের গোড়া সমান্য মাটি ভালো করে  চেপে দিতে হবে। চারা রোপণের সময় চারার গোড়ার মাটির হারি যেন ভেঙে না যায় ।এবং চারা গোড়াটি প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাটির নিচে ঢুকে না যায় সেদিকে ভালো কোরে দেখতে  হবে। রোপণের পর চারার গোরাই  খুঁটি দিয়ে খুঁটি  সাথে ভালো করে  বেঁধে দিতে হবে। চারাটি বিকেল বেলায় চারা/কলম রোপণ করা ভাল হয় । রোপণের পর কোণ বৃষ্টি না থাকলে কয়েকদিন নিয়মিত সেচ দিতে হবে। 

আম গাছের পোকা আক্রমণ দমনঃ

আম গাছে নতুন পাতা বের হলে পাতাকাটা উইভিল পোকা আক্রমণ করতে পারে অনেক । কচি পাতার নিচের পিঠে মধ্যশিরার উভয়পাশে স্ত্রী পোকা ডিম পাড়ে ফলে । পরে স্ত্রী পোকা ডিমপাড়া পাতাটির বোঁটার কাছাকাছি কেঁটে দিয়ে থাকে । শেষে গাছটি পাতাশূন্য হিন হয়ে যায়। কেঁটে দেয় পাতা মাটি থেকে সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে বা মাটির নিছে পুতে রাখতে হবে । গাছে ছোটো কচি পাতা বের হওয়ার ৬ দিন এবং ১২ দিন পর প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম সেভিন অথবা যেকোনো কীটনাশক জমিতে নির্দেশিত মাত্রায় সেপ্র করলে পোকার আক্রমণ হয় না।

 বাজারজাত করন আম নির্বাচনঃ

 বাংলা দেশে বাজারজাত করার জন্য কোন জাত আমের চাহিদা বেশি ভালো ও গুণগতমান ভাল এবং বাজারমূল্য বেশি থাকে তা জানা দরকার আছে । আমাদের দেশে বেশ কিছু উত্কৃষ্ট মানের আমের জাত যেমনঃ(ল্যাংড়া,খিরসাপাত,হিমসাগর, খিরসাপাত, ফজলী, গোপাল ভোগ ও বোম্বাই ইত্যাদি জাত ) রয়েছে। যেগুলো রঙিন না হলেও স্থানীয় বাজারে এর চাহিদা আনেক বেশি। কিন্তু এ জাতগুলো বিদেশে রফতানি করে চাইলে তেমন মুনাফা পাওয়া যাবে না। কারণ বিদেশের বাজারে রঙিন ও হালকা মিষ্টি আমের চাহিদা বেশি থাকে । এর জন্য বারি আম-২ এবং বারি আম-৭ জাত দু’টি উপযুক্ত। তবে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতি বছর ফল দিতে সক্ষম এমন কয়েকটি জাত উদ্ভাবন করেছে। জাতগুলো হলো বারি 

আম-১,২,৩,৪,৫,৬,৭ও৮। এ জাতের চারা দিয়ে বাগান করলে ভাল ফলনের পাশাপাশি লাভো বান হওয়া যায়।

অতি ঘন পদ্ধতিতে আম চাষ


আম চাষের জন্য একটি বৈজ্ঞানি পদ্ধতি হচ্ছে অতি ঘন পদ্ধতি, কিছু দশক আগের আমবাগান গুলোতে দেখা যায়, সেগুলো কমপক্ষে ২৫ বা ৩০ ফুট দূরত্বে অর্থাৎ প্রতি হেক্টরে ১০০-১২৫ টি কলম লাগানো হতো তবে কোন কোন ক্ষেত্রে ৩৫ বা ৪০ ফুট  দূরত্বের বাগানও দেখা যায়। অনেক বড় আম বাগানে এক বিঘা জমিতে  একটি বা দুইটি আমগাছ দেখা যায়।

অতি ঘন পদ্ধতিতে আম চাষ ভালো ফলন পেতে করণীয়ঃ


প্রতি বছর গাছের গোরাই  বয়স আনুযায়ী ও সুষমমাত্রার সার প্রয়োগ করতে হবে। শুধুমাত্র রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করে সাথে কিছি পচা গোবর সার/ জৈবসার/ ভার্মিকম্পোস্ট/ ট্রাইকোকম্পোস্ট/ আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা উত্তম হবে  ।আম সংগ্রহ করার পরপরই প্রলি করতে হবে। তবে প্রয়োজন হলে ট্রেনিং কোরতে পারেন ।নতুন পাতা বের হলে এ্যানথ্রাকনোজ রোগ এবং পাতাকাটা উইভিল পোকার আক্রমণ দেখা যায় সেক্ষেত্রে কার্বারিল গ্রুপের কীটনাশক ও মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রতিলিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে কিটনাশক  একত্রে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। অন্যথায় নতুন ডগাপাতা শূন্য হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। খরা মৌসুমে এবং সার প্রয়োগের পর পানি সেচের ব্যবস্থা করা ।


অতি ঘন পদ্ধতিতে আম বাগানে পর্যাপ্ত আলো  বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। ফলে পোকা ও মাছি পোকার উপদ্রব বেশি হয় । সেজন্য পোকা যেন না থাকে সেজন্য ইমিডাক্লোপ্রিড/কার্বারিলগ্রুপের যে কোন ভাল কীটনাশক নির্দেশিত মাত্রায় স্প্রে করতে হবে এবং মাছি পোকা দমনের জন্য সঠিক সময় ও পদ্ধতি অনুসরণ করে ফ্রটব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে।
এ ছাড়াও আম বাগানে অন্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেজন্য আম গাছের পরিচর্যার নিতে হবে ।

শেয়ার করুনঃ