লেবু

লেবু ফলের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এটি আমাদের দেশে একটি জনপ্রিয় ফল। আমাদের যে কোনো অনুষ্ঠান  খাবারের সাথে লেবু ছাড়া চলেই না ।তাই আপনি এই লেবু আপনার বাড়ির ছাদে বা আপনার বাড়ির উঠানে না জমিতে লেবু চাষ করতে পারেন। বাড়ির ছাদে দুটি লেবু গাছ থাকলে সারা বছরই লেবুর চাহিদা মেটানো সম্ভাব ।

লেবু চাষের জন্য টব বা মাটি প্রস্তুত করুনঃ সাধারণত, লেবু জন্মানোর জন্য হালকা দোআঁশ ও অম্লীয় মাটি বেছে নিতে হবে। কারণ এই সব মাটি লেবু চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। এ মাটিতে লেবু চাষ করলে প্রচুর ফলন পাওয়া যায়। লেবু গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তাই ভালো নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকা জরুরি।বৃষ্টির পর পানি জমে থাকলে তা দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

কোন ধরনের টব বা কন্টেইনার আকৃতি বেছে নেবেন? লেবু বাড়ানোর জন্য আপনাকে একটি মাঝারি আকারের টব বা ড্রাম নিতে হবে। লেবুর গাছগুলো বড় হওয়ায় এক্ষেত্রে আপনাকে সঠিক পাত্রটি বেছে নিতে হবে। বাড়ির উঠোনে বা জমিতে লেবু চাষ করতে পারেন।

জাত নির্বাচনঃ আমাদের দেশে লেবুর অনেক জাত রয়েছে। তবে উন্নত মানের লেবুর কিছু জাত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে বাউ কাগজি লেবু-১, বাউ লেবু-২, (সুগন্ধি এলাচ) এবং বাউ লেবু-৩ (আধা বীজহীন) ইত্যাদি।

 চাষ বা রোপণের সঠিক সময়ঃ আপনি চাইলে বছরের যে কোন সময় লেবু চাষ করতে পারেন। তবে লেবু চাষের উপযুক্ত সময় বৈশাখ মাস থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত। এ সময় লেবু গাছ লাগালে খুব ভালো ফলন পাওয়া যায়।

বীজ এবং জল সঠিকভাবে বপন করুনঃ লেবু গাছ লাগানোর জন্য নিকটস্থ নার্সারী থেকে ভালো মানের চারা সংগ্রহ করতে হবে। আপনি ইচ্ছা করলে ছোট ছোট কাটিং ও কাটিং করেও লেবু চাষ করতে পারেন। যে পাত্রে লেবু জন্মে তার নীচে অন্তত তিন থেকে চারটি ছিদ্র করতে হবে, যাতে গাছের গোড়ায় পানি না জমে। টব বা ড্রামের নিচের গর্তগুলো ছোট ছোট ইটের টুকরো দিয়ে বন্ধ করতে হবে। উল্লেখ্য, লেবু গাছে খুব কম পানি লাগে। তাই লেবু গাছে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক পরিমাণে পানি দিতে হবে।

লেবু চাষের পদ্ধতিঃ লেবু গাছ লাগানোর সময়, আপনাকে প্রথমে মাটি প্রস্তুত করতে হবে। তাই বিভিন্ন ধরনের সার একত্রে টবে বা পাত্রে মিশিয়ে ১০ থেকে ১২ দিন পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। কয়েকদিন পর আবার পাত্রের মাটি আলগা করে দিতে হবে। তারপর দেখতে হবে মাটি রুক্ষ কিনা। আলগা মাটিতে চারা রোপণ করতে হবে। রোপণের পর সার ও কীটনাশক সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে। গাছ একটু বড় হলে কয়েকদিন পর গাছের গোড়ায় সরিষার পাতা দিয়ে পানি ঝরিয়ে দিতে হবে।

সারের পরিমাণ এবং প্রয়োগঃ লেবু গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সার হলো নাইট্রোজেন, ফসফরাস এবং পটাশিয়াম।বছরে ৩-৪ বার সার দিতে হবে। চাষের ক্ষেত্রে লেবু গাছের গোড়ায় ঘরে তৈরি জৈব সার প্রয়োগ করতে পারেন। যেমন, আপনি গোবর, হাড়ের গুঁড়া, কাঠের ছাই ইত্যাদি দিতে পারেন। এছাড়াও অজৈব সার হিসেবে আপনি টিএসপি সার, পটাশ সার, চুন ইত্যাদি ব্যবহার করতে পারেন।

কীটনাশক কীভাবে প্রয়োগ করবেনঃ লেবু গাছে কীটনাশক ও সার নিয়মিত প্রয়োগ করতে হবে। বর্ষার সাত দিন আগে কয়েকবার ছত্রাকনাশক স্প্রে করা ভালো। তবে গাছে ফুল বা ফল হলে কীটনাশক স্প্রে করা এড়াতে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।

লেবু বাগানের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণঃ লেবু গাছের সঠিক পরিচর্যা করা দরকার। রোপণের সময় খেয়াল রাখতে হবে, যাতে গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে না যায়। রোপণের পরে, গাছের গোড়ার মাটি কিছুটা উঁচু করতে হবে। আর গাছের গোড়ায় যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। গাছের গোড়ায় পানি জমে না যাতে তা স্যাঁতসেঁতে না হয়। লেবু গাছকে সঠিকভাবে বাড়তে দেওয়ার জন্য, এর শাখাগুলি ছাঁটাই করতে হবে। গাছের মরা ও শুকনো ডাল কেটে গাছ পরিষ্কার রাখতে হবে।

লেবুর খাদ্যগুণ ঃ লেবু ভিটামিন সমৃদ্ধ একটি ফল। লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম লেবুতে প্রায় ৫৩মিলিগ্রাম ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড পাওয়া যায়।

লেবুর ঔষধি গুণাবলীঃ লেবুর রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। লেবুর রসে মধু, লবণ ও আদা মিশিয়ে পান করলে সর্দি-কাশি উপশম হয়। এ ছাড়া লেবুর শরবত ব্যবহারে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে, শরীরের অতিরিক্ত মেদ কমে, শরীরের ওজন কমে, শরীরের রোগও কম হয়। লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিড ক্যালসিয়াম নিঃসরণ কমিয়ে পাথরের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। জ্বরের জন্য লেবু খুবই উপকারী।


লেবুর উপকারিতাগুলি বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায়। নিচে লেবুর কিছু প্রধান উপকারিতা দেওয়া হলো:

  • উচ্চ ভিটামিন সি এর উৎস: লেবু ভিটামিন সি-এর একটি সমৃদ্ধ উৎস যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
  • হজমশক্তি বৃদ্ধি: লেবুর রস হজমে সাহায্য করে এবং পেটের গ্যাস কমায়।
  • ওজন কমানো: লেবুর রস মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের যত্ন: লেবুর রস ত্বকের দাগ ও ব্রণ দূর করে ত্বক উজ্জ্বল করে।
  • কিডনি পাথর প্রতিরোধ: লেবুর সাইট্রিক অ্যাসিড কিডনি পাথর গঠনে বাধা দেয়।
  • শক্তি বৃদ্ধি: লেবু শরীরের জন্য তাৎক্ষণিক শক্তির উৎস।
  • মুখের দুর্গন্ধ দূর: লেবুর রস মুখের দুর্গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে।
  • রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: লেবুর রস উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
  • রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: লেবুর ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা কমায়: লেবুর রস শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ ও কাশিতে সহায়ক।
  • লিভার ডিটক্স: লেবুর রস লিভার ডিটক্সিফাই করতে সাহায্য করে।
  • পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখা: লেবু শরীরের পিএইচ ব্যালেন্স বজায় রাখতে সাহায্য করে।
  • জ্বর কমানো: লেবুর রস জ্বর কমাতে সাহায্য করে।
  • রক্তস্বল্পতা কমানো: লেবুর ভিটামিন সি শরীরে আয়রনের শোষণ বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা কমায়।
  • চুলের যত্ন: লেবুর রস চুলের খুশকি কমায় এবং চুলের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: লেবুতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরকে বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করে।
  • হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করা: লেবুর পটাশিয়াম হার্টের স্বাস্থ্য উন্নত করে।
  • মূত্রবর্ধক: লেবুর রস মূত্রবর্ধক হিসেবে কাজ করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।
  • বাত ব্যথা কমানো: লেবুর রস ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
  • স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি: লেবুর ভিটামিন সি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে।

এই সবগুলো উপকারিতাই লেবুকে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উপাদান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে।

শেয়ার করুনঃ