শীত ও গ্রীষ্ম উভয় ঋতুতেই বাণিজ্যিকভাবে বোম্বাই মরিচ চাষ করা হয়। মরিচের প্রতি আমাদের অনেকেরই দুর্বলতা রয়েছে। ইচ্ছা এবং একটু প্রচেষ্টার মাধ্যমে আমরা কিছু দিনেই নিজেরাই নাগা/ বোম্বাই মরিচ চাষ করতে পারি। পতিত বা অন্য জমিতেও বাণিজ্যিকভাবে বোম্বাই মরিচ চাষ করা যায়। ছাদের টবেও মরিচের ফলন ভালো হয়।বাংলাদেশের সিলেট অঞ্চল ছাড়াও মণিপুর, নাগাল্যান্ড, আসাম, নেপাল, থাইল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকায় এই মরিচের ব্যাপক চাষ হয়।বোম্বাই মরিচ তার তীব্র গরমের জন্য সবচেয়ে বেশি পরিচিত। বলা যায় সবার প্রিয়। একটু চেষ্টা করলেই ১ মাসে বোম্বাই মরিচ চাষ করা যায়। বোম্বাই মরিচ ছাদে, বারান্দায়, ভবনের চারপাশে টবে ভাল জন্মে। তাই আজ থেকে চেষ্টা করে দেখুন। এখন চাষের নিয়ম-কানুন জেনে নিন-
বোম্বাই মরিচ একটি জনপ্রিয় মরিচ যা প্রায়শই ভারতীয় রান্নায় ব্যবহৃত হয়। এটি চাষ করতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ অনুসরণ করতে হয়। নিচে বোম্বাই মরিচ চাষের বিস্তারিত ধাপগুলো দেওয়া হলো:
মাটি প্রস্তুতি
মাটির ধরন : বোম্বাই মরিচ হালকা ও ভালো নিষ্কাশন যুক্ত দোআঁশ মাটিতে ভালো জন্মায়। মাটির পিএইচ স্তর ৬.০ থেকে ৭.০ হওয়া উচিত।
মাটি প্রস্তুতি: মাটি ভালোভাবে চাষ করে নিতে হবে যাতে এটি নরম ও ঝরঝরে হয়। মাটিতে পচা গোবর বা কম্পোস্ট মিশিয়ে মাটির উর্বরতা বাড়াতে হবে।
বীজ রোপণ
বীজ বপন: বীজ বপনের আগে, বীজগুলো ২৪ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে দ্রুত অঙ্কুরোদগম হয়। বীজগুলো ১-২ সেমি গভীরতায় বপন করতে হবে।
চারা তৈরি: বীজ বপনের ৭-১০ দিনের মধ্যে চারা গজাতে শুরু করবে। যখন চারা গজাবে তখন এগুলো আলাদা আলাদা করে দিতে হবে যাতে প্রতিটি চারা পর্যাপ্ত স্থান পায়।
চারার যত্ন
সেচ: চারা গজানোর পর নিয়মিত সেচ দিতে হবে, কিন্তু মাটিতে জলাবদ্ধতা হতে দেওয়া যাবে না। প্রয়োজন মতো মাটির আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে।
সার প্রয়োগ : চারা গজানোর ৪-৬ সপ্তাহ পরে নাইট্রোজেন, ফসফরাস, এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ সার প্রয়োগ করতে হবে।
গাছ রোপণ
পরিসর: চারাগুলো যখন ১৫-২০ সেমি উঁচু হবে তখন সেগুলো চূড়ান্ত স্থানান্তরের জন্য প্রস্তুত। গাছগুলো ৩০-৪৫ সেমি দূরত্বে রোপণ করতে হবে।
সেচ ও আগাছা দমন: সঠিক সময়ে সেচ দিতে হবে এবং নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
রোগ এবং কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ
রোগ নিয়ন্ত্রণ: মরিচ গাছের সাধারণ রোগগুলো হলো ব্লাইট, পাউডারি মিলডিউ এবং ভেষজের মূলে পচন। রোগ প্রতিরোধের জন্য নিয়মিত মাশলা স্প্রে করতে হবে।
কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণ: বিভিন্ন কীটপতঙ্গ যেমন এফিড, জ্যাসিড, এবং থ্রিপস নিয়মিত মনিটর করতে হবে এবং প্রয়োজনে কীটনাশক ব্যবহার করতে হবে।
ফলন সংগ্রহ
ফলন সময়: বোম্বাই মরিচ গাছ সাধারণত ২-৩ মাসের মধ্যে ফল দিতে শুরু করে।
ফলন সংগ্রহ: মরিচ যখন সম্পূর্ণ পরিপক্ব হয় তখন সেগুলো সংগ্রহ করা যায়। ফল সংগ্রহের সময় মরিচের রঙ এবং আকার দেখে তা নিশ্চিত হতে হবে।
পরবর্তী যত্ন
পরবর্তী যত্ন: ফল সংগ্রহের পর গাছের যত্ন নিতে হবে যাতে এটি আবার ফল দিতে পারে। নিয়মিত সার প্রয়োগ এবং সেচ দিতে হবে।
বোম্বাই মরিচ চাষে সফল হতে এই ধাপগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করলে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব।
উপকারিতা
বোম্বাই মরিচ সাধারণত কাঁচা মরিচ বা বোম্বাই লংকা নামে পরিচিত। এটি অনেক উপকারিতা নিয়ে আসে। নিচে বোম্বাই মরিচের কিছু প্রধান উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
বোম্বাই মরিচে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে এবং সর্দি-কাশি প্রতিরোধে সাহায্য করে। এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের ফ্রিরইয়াডিক্যাল দূর করতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।বোম্বাই মরিচ মেটাবলিজম বাড়ায় এবং ক্যালোরি বার্ন করতে সাহায্য করে, যা ওজন কমাতে সহায়ক।মরিচের মধ্যে ক্যাপসাইসিন থাকে যা রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।ক্যাপসাইসিনের কারণে মরিচ প্রাকৃতিক ব্যথা নিরাময়ে কার্যকর।মরিচ হজম শক্তি বাড়াতে সহায়ক এবং অন্ত্রের সমস্যার সমাধানে সাহায্য করে।মরিচের এন্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাবলী প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।বোম্বাই মরিচে থাকা ভিটামিন এ এবং ভিটামিন ই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।যদিও বোম্বাই মরিচ অনেক উপকারিতা নিয়ে আসে, তবে অতিরিক্ত মরিচ খাওয়া পেটের সমস্যা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই, পরিমিত পরিমাণে মরিচ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।