আম সংগ্রহ প্রক্রিয়া:বাংলাদেশে সাধারণত বৈশাখ মাস থেকেই গাছে গাছে কিছু কিছু আম পাকা শুরু করলেও মূলত জ্যৈষ্ঠ মাসেই পরিপূর্ণ আম পাকে এবং আমের স্বাদ পাওয়া যায় । তবে আম একটি জাতীয় ফল, যার আম কাঁচা বা পাকা দুইটার স্বাদেই কদর আলাদা আলাদা হয়।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রায় ছয় হাজার বছরের আগের পুরোনো ফল আম। অসাধারণ স্বাদ ও গন্ধের মিলে মিশে এই ফলের গাছকে জাতীয় বৃক্ষ হিসেবেও স্বীকৃতিও দেওয়া হয়েছে আমাদের দেশে। আম ১২ মাস পাওয়া যায় না। তবে এখন আধুনিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ তো করাই যাবে। এতে আমের স্বাদ কিছুটা কমবে।কাঁচা এবং পাকা দুই ধরনের আমই জ্যাম, জেলি বা আচার না বানিয়ে সংরক্ষণ করা যাবে। আম ফ্রিজে রেখে  বরফ তৈরি করে সংরক্ষণ করা গেলে একটু বেশি দিন রাখা বা খাওয়া যাবে। তবে বরফ না করেও  ফ্রিজে না রেখেও কয়েক দিন পর্যন্ত আম ভালো রাখা ও সম্ভব বলে জানান রাজধানীর গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী এ ছাড়া আম সংরক্ষণের জন্য তাঁর দেওয়া আরও কিছু পরামর্শ জেনে নেওয়া যাক নিচে ।

কাঁচা আম সংগ্রহ প্রক্রিয়া : এই যুগে দীর্ঘদিনের জন্য কাঁচা আম সংরক্ষণ করতে চাইলে ফুটন্ত পানিতে কাঁচা আম চার টুকরো করা আম ছেড়ে দিয়ে কয়েক মিনিট পর তুলে নিতে হবে। এবার ভালোমতো পানি শুকিয়ে বায়ুরোধক পাত্রে পাতলা পাতলা করে সাজিয়ে রেখে সংরক্ষণ করা যাবে। অল্প কিছু দিনের জন্য আম সংরক্ষণ করতে চাইলে লবণ ও হলুদ মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে ফ্রিজে রেখে সংরক্ষণ করতে পারেন। ফ্রিজে সংরক্ষণ করতে না চাইলে প্রথমে রোদে শুকিয়ে ভালো মানের খাঁটি শর্ষের তেলে ডুবিয়ে রেখে আম অনেক দিন সংরক্ষণ করতে পারবেন।

অল্প পাকা আম সংগ্রহ প্রক্রিয়া ঃ

অল্প পাকা আম সংরক্ষণের জন্য খোসাসহ আম দুই টুকরো করে বায়ুরোধক পাত্রে রাখতে পারেন আনেক দিন।

পাকা আম সংগ্রহ প্রক্রিয়া

পাকা আম কচলে বা চিপে নিয়ে বা কেটে ব্লেন্ডারে পাতলা মিশ্রণ তৈরি করে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়। তবে বেশি সময়  ধরে থাকলে স্বাদ ও ঘ্রাণ কমে যায়।

এ ছাড়া চালনিতে বা নেটে আমের মিশ্রণ ছেঁকে আঁশগুলো ভিন্ন করে ফেলে এটি সংরক্ষণ করা যায়। কারণ, এতে আমে পানির পরিমাণ অনেক কমে যায় এবং ডিপে দীর্ঘদিন তা ভালো থাকে। আর সাধারণ ভাবে ফ্রিজে না রেখে এটি কাচের বোতলে আম রাখলে প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস ভালো থাকে।

আম সংগ্রহ প্রক্রিয়া কিছু টিক্স যেনে নি :

1.   আম ফ্রিজে সংরক্ষণের জন্য আম টি বেশি পাকা নেবেন না। খানিকটা শক্ত ও অল্পো পাকা আম নিবেন  এবং খোসায় কোনো  দাগ  বা ইস্পট নেই এমন কিছু আম বাছাই করুন।

2. আম সংরক্ষণের জন্য সেরা পদ্ধতি হলো অতিরিক্ত পাকা আমকে পিউরি করা এবং তারপর সংরক্ষণ করা। প্রথমে আপনার চামচ বা ছুরি দিয়ে আমের চামরা বা পরিসর বের করুন। তারপর আমের পরিসর এবং কোনো দূষিত অংশগুলি অপসারণ করুন। এরপরে আমকে ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে পিউরি করুন। পিউরি করার পরে আমকে কোনো কাচের জার বা প্লাস্টিকের জারে রেখে ফ্রিজে রাখুন বা ফ্রিজের বাহিরে ঠান্ডা স্থানে রেখে দিন। পাকা আমকে সর্বোচ্চ ১-২ সপ্তাহের মধ্যে সেলিং করা উচিত। সেলিংের জন্য আমকে পুনরাবৃত্তি প্লাস্টিকের জারে বা ডিপ ফ্রিজার প্যাকেটে রাখা যেতে পারে। এছাড়াও, আমের সেলিংের সময় আমের পাশে বাকি আমগুলি না থাকলে সেলিং উপযুক্ত হবে।

3.    অতিরিক্ত কোনো পাকা আম সংরক্ষণ করতে চাইলে পিউরি করে তারপর সংরক্ষণ করবেন।

4.  আম সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সবসময় ছোট বক্স বা ছোট জিপলক ব্যাগ ব্যবহার করবেন। এতে প্রয়োজন মতো বের করে নেওয়া যাবে। নাহলে অল্প খানিকটা আম প্রয়োজন হলে পুরো বক্সই ডিফ্রস্ট করতে হবে। এতে আমের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

5.  চাইলে মোরব্বা, আমসত্ত্ব কিংবা আচার বানিয়েও আম সারা বছর খেতে পারেন।

শেয়ার করুনঃ