নিম একটি ঔষধি গাছ যার শাখা, পাতা ও রস উপকারী। শুধুমাত্র নিম দ্বারা ২২ টি রোগ নিরাময় হয়। আজকাল প্রসাধনী হিসেবেও নিম পাতা ব্যবহার করা হয়। অ্যান্থেলমিন্টিক হিসেবে নিমের রস খুবই কার্যকরী।
নিমের কাঠও খুব শক্ত। এই কাঠের গন্ধ নেই। পোকামাকড় বাসা বাঁধে না। পোকা খেতে পারে না।
নিমের এসব গুণাবলি বিবেচনা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা একে ‘একবিংশ শতাব্দীর গাছ’ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
নিম দ্বারা ২২টি রোগ নিরাময়:
১. চুলকানি বা চুলকানি ত্বক
নিম পাতা সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে চুলকানির উপশম হবে। পাতা বা ফুল ত্বকে কয়েকদিন লাগালে চুলকানি সেরে যাবে। পাতা ভেজে গুঁড়ো করে সরিষার তেলের সঙ্গে মিশিয়ে চুলকানিতে লাগালে ম্যাজিকের মতো কাজ করে।৭-১০ দিন আক্রান্ত স্থানে নিম পাতার সাথে সামান্য কাঁচা হলুদের গুঁড়ো লাগালে চুলকানি এবং পুরানো ক্ষত উপশম হয়। নিম পাতা ভিজিয়ে ক্ষতস্থানে লাগালে ক্ষত খুব দ্রুত সেরে যায়।
২. অ্যান্থেলমিন্টিক
পেটের কৃমি শিশুদের দুর্বল করে। পেটে বাড়ে। মুখ ফ্যাকাশে।বাছুরের অন্ত্রের কৃমি দূর করতে নিম পাতা ব্যবহার করা হয় না। শিশুরা কৃমির উপদ্রব বেশি হয়। এর জন্য ৫০ মিলিগ্রাম নিম মূলের ছালের গুঁড়া দিনে ৩ বার অল্প গরম জলে খেতে হবে। আবার ৩-৪ গ্রাম নিমের ছাল চূর্ণ করে অল্প পরিমাণ সৈন্ধব লবণ মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে কৃমির উপদ্রব রোধ হয়। এক সপ্তাহ নিয়মিত খান। শিশুদের জন্য ১-২ গ্রাম সুপারিশ করা হয়।
৩. চামড়া
যুগ যুগ ধরে সৌন্দর্যে নিম ব্যবহার হয়ে আসছে। ত্বকের দাগ দূর করতে নিম খুব ভালো কাজ করে। এটি ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে। ব্রণ দূর করতে নিম পাতা লাগাতে পারেন। ঘরে তৈরি নিম বড়িও খাওয়া যেতে পারে। বড়ি প্রস্তুত করতে নিম পাতা ধুয়ে পিষে নিন। এবার হাত দিয়ে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করুন। একটি বড় থালায় একটি ফ্যানের মধ্যে একটি দিনের জন্য ছেড়ে দিন। পরের দিন রোদে শুকাতে দিন। নিম বড়ির জল সম্পূর্ণ শুকিয়ে গেলে একটি বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করুন। নিম পাতা অ্যান্টি-ফাঙ্গাল এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল। তাই ত্বকের সুরক্ষায় এর জুড়ি নেই। ব্রণ সংক্রমণের ক্ষেত্রে নিম পাতার প্রয়োগ অবশ্যই ভালো ফল দেবে। অনেকের মাথার ত্বকে চুলকানি থাকে, নিয়মিত নিম পাতার রস মাথার ত্বকে লাগালে এই চুলকানি কমে যায়। নিয়মিতভাবে নিম পাতার সাথে কাঁচা হলুদের পেস্ট লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বকের রঙ উজ্জ্বল হয়। তবে হলুদ ব্যবহার করলে রোদ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। নিম পাতার তুলনায় হলুদের পরিমাণ কম হবে। গোসলের পানিতে সেদ্ধ পানিতে নিম পাতা মিশিয়ে নিন। যাদের খিটখিটে এবং চুলকানিযুক্ত ত্বক রয়েছে তারা স্বস্তি পাবেন এবং শরীরের গন্ধ কমাতে পারবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
৪. দাঁতের রোগ
নিমের ডালের সাথে মেসওয়াক প্রাচীনকাল থেকেই দাঁতের স্বাস্থ্যের জন্য ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নিম পাতা এবং ছালের গুঁড়া বা নিমের ডাল দিয়ে নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করলে আপনার দাঁত মজবুত হবে এবং দাঁতের রোগ প্রতিরোধ হবে। কচি নিম পাতা দিয়ে দাঁত ব্রাশ করা আপনার দাঁতের জন্য ভালো। নিম পাতার নির্যাস পানিতে মিশিয়ে বা নিম দিয়ে আলতো করে মুখ ধুলে দাঁতের আক্রমণ, দাঁতের ক্ষয়, রক্ত পড়া ও মাড়ির ব্যথা কমে যায় এবং বুকে কফ থাকলে ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে তিন থেকে চারবার খেলে। এক দিন. উপকারী ।
৫. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা
নিম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করে। নিম পাতা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়াও রক্তনালী প্রসারিত করে সঞ্চালন উন্নত করে। ভালো ফলাফলের জন্য প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কচি নিম পাতার রস পান করুন। সকালে খালি পেটে ৫টি গোলমরিচ ও ১০টি নিম পাতা খেলে ডায়াবেটিস কমে।
৬. চুল
ঝলমলে, সুন্দর ও সুন্দর চুল পেতে নিম পাতার অবদান অপরিসীম। খুশকি থেকে মুক্তি পেতে সেদ্ধ পানিতে নিম পাতা ম্যাসাজ করুন এবং শ্যাম্পু করার সময় ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। খুশকি চলে যাবে। চুলের জন্য নিম পাতার ব্যবহার অনন্য। সপ্তাহে একদিন নিম পাতা ভালো করে পিষে চুলে লাগিয়ে রাখুন ১ ঘণ্টা। ১ ঘণ্টা পর ভালো করে ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন চুল পড়া কমে যাবে এবং চুল নরম ও কোমল হবে। মধু ও নিম পাতার রস একসাথে মিশিয়ে গোড়া থেকে গোড়া পর্যন্ত লাগান সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন। এখন ২০ মিনিট অপেক্ষা করুন। শ্যাম্পু প্রয়োগ করুন এবং চকচকে এবং সুন্দর চুল আছে। এক চা চামচ আমলকির রস, এক চা চামচ নিম পাতার রস, এক চা চামচ লেবুর রস, টকদি প্রয়োজনমতো মিশিয়ে সপ্তাহে ২ দিন চুলে লাগান এবং আধা ঘণ্টা পর শ্যাম্পু করুন।
৭. উকুন ধ্বংস
নিমের ব্যবহার মাথার উকুন নিরাময় করে। নিমের পেস্ট তৈরি করে মাথার ত্বকে ম্যাসাজ করুন, তারপর শ্যাম্পু করুন এবং উকুন চিরুনি দিয়ে মাথার ত্বক আঁচড়ে নিন। এটি ২ মাস সপ্তাহে ২-৩ বার করুন। উকুন চলে যাবে।
৮. খুশকি ধ্বংস হয়
নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য খুশকির চিকিৎসায় উপকারী। নিম মাথার ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি দূর করে। খুশকির চিকিৎসা নিমের অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্যের কারণে খুশকির চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। নিম মাথার ত্বকের শুষ্কতা এবং চুলকানি দূর করে। চার কাপ পানিতে একমুঠো নিম পাতা গরম না হওয়া পর্যন্ত ফুটিয়ে নিন ।
৯. ওজন কমাতে
আপনি যদি ওজন কমাতে চান, বিশেষ করে পেট, তাহলে নিম ফুলের রস খাওয়া উচিত। নিম ফুল মেটাবলিজম বাড়িয়ে শরীরের চর্বি ভাঙতে সাহায্য করে। একমুঠো নিম ফুল গুঁড়ো করে তাতে এক চামচ মধু ও আধা চামচ লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিন। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে এই মিশ্রণটি পান করুন। এটা কাজ করবে।
১০. রক্ত বিশুদ্ধ করে
নিম পাতার রস রক্ত পরিষ্কার করে এবং ব্লাড সুগার কমায়। এছাড়াও এটি রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে হৃদস্পন্দন স্বাভাবিক রাখে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও নিমের কোনো মিল নেই।
১১. ঠান্ডার কারণে বুকে ব্যথা
অনেক সময় বুকে কফ জমে বুকে ব্যথা হয়। এর জন্য ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস সামান্য গরম পানিতে মিশিয়ে ৩/৪ বার খেলে বুকের ব্যথা কমে যাবে। গর্ভবতী মহিলাদের জন্য ওষুধটি সুপারিশ করা হয় না।
১২. পোকামাকড়ের কামড়
নিমের মূলের ছাল বা পাতা আক্রান্ত স্থানে লাগালে পোকামাকড়ের কামড় বা কামড়ের কারণে ব্যথা উপশম হয়।
১৩. জন্ডিস
জন্ডিস হলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিম পাতার রস সামান্য মধুর সাথে খান। ২৫-৩০ ফোঁটা নিম পাতার রসে সামান্য মধু মিশিয়ে সকালে খালি পেটে খেলে জন্ডিস সেরে যায়। জন্ডিসের ক্ষেত্রে এক চামচ রসের সঙ্গে সামান্য মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খান। সম্পূর্ণ নিরাময়ের জন্য এটি এক সপ্তাহের জন্য চালিয়ে যেতে হবে।
১৪. ভাইরাস রোগ
ভারতীয় উপমহাদেশে ভাইরাল রোগের চিকিৎসা নিম ব্যবহার করা হয়। নিম পাতার রস ভাইরাস মেরে ফেলে। আগে নিম পাতার পেস্ট চিকেন পক্স, হাম এবং অন্যান্য চর্মরোগের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হত। এছাড়াও নিম পাতা পানিতে সিদ্ধ করে সেই পানি দিয়ে গোসল করলে ত্বকের জ্বালা ও চুলকানি দূর হয়।
১৫. ম্যালেরিয়া
গ্যাডোনিন সমৃদ্ধ নিম ম্যালেরিয়ার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও নিম পাতা সিদ্ধ পানিতে ঠান্ডা করে স্প্রে বোতলে রাখুন। প্রতিদিন ঘরে স্প্রে করলে মশার উপদ্রব কমবে।
১৬. বাত
বাতের ব্যথা সারাতে নিম পাতা, নিমের বীজ এবং বাকল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাতের ব্যথার জন্যও নিমের তেলের মালিশ খুবই উপকারী। বাতের ব্যথা সারাতে নিম পাতা, নিমের বীজ এবং বাকল ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। বাতের ব্যথার জন্যও নিমের তেলের মালিশ খুবই উপকারী।
১৭. চোখ
১০ মিনিট পানিতে নিম পাতা সিদ্ধ করুন এবং চোখ চুলকাতে থাকলে ঠান্ডা করুন। চোখে জলের ছিটা। আরামদায়ক বোধ
১৮. ব্রণ দূর করতে
নিম পাতার গুঁড়া পানিতে মিশিয়ে মুখ ধোয়া যেতে পারে। এতে ব্রণ দূর হবে এবং ব্রণের কারণে হওয়া জ্বালাপোড়াও দূর হবে। এটি ব্রণ দূর করার একটি কার্যকরী পদ্ধতি।
১৯. ছত্রাকের সংক্রমণ দূর করতে
আপনার পায়ে ছত্রাকের সংক্রমণ হলে নিম ব্যবহার করুন। নিমে আছে নিমবিডল এবং জেডুনিন যা ছত্রাক মেরে ফেলতে পারে। নিম পাতার পেস্ট বানিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগালে রোগ সেরে যায়। আক্রান্ত স্থানে কয়েক ফোঁটা এই নিমের তেল দিনে ২-৩ বার লাগালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
ক্ষত নিরাময় হয়তো ভাবছেন নিম কীভাবে ক্ষত সারাতে পারে? হ্যাঁ, ক্ষত সারাতেও নিম পাতা খুবই উপকারী। ক্ষতস্থানে নিম পাতা লাগাতে পারেন। এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ক্ষত নিরাময়ে দ্রুত কাজ করবে।
২০. অপাচ্য
অনেক দিন ধরে পেট ব্যাথা? ডায়রিয়া হলে ৩০ ফোঁটা নিম পাতার রস ৪/১ কাপ পানিতে মিশিয়ে সকাল-সন্ধ্যা সেবন করুন।
২১. অ্যালার্জি
অ্যালার্জির সমস্যায় নিম পাতা সিদ্ধ করে গোসল করুন। অ্যালার্জি ১০০ হাত দূরে থাকবে। তাছাড়া কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা একসঙ্গে পেঁচিয়ে শরীরে লাগান। অ্যালার্জি কমে যাবে।
২২. একজিমা
একজিমা, ফোঁড়া বা ত্বকের অন্য যেকোনো সমস্যা নিরাময়ে নিম খুবই কার্যকর। ত্বকের যেসব জায়গায় এই ধরনের সমস্যা আছে সেখানে নিম পাতা লাগাতে পারেন।