ড্রোন প্রযুক্তি দিয়ে চাষাবাদ – বাংলাদেশের কৃষিতে এক নতুন বিপ্লব
বর্তমান সময়ে বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তির ব্যবহার যেভাবে বেড়েছে, তেমনভাবেই বাংলাদেশের কৃষি খাতে নতুন প্রযুক্তির ঢেউ লেগেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল ড্রোন প্রযুক্তি। ড্রোন প্রযুক্তি কেবলমাত্র আকাশ থেকে ছবি তোলার জন্য নয়, বরং এখন এটি হয়ে উঠেছে আধুনিক চাষাবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ড্রোন কী এবং এটি কিভাবে কাজ করে?
ড্রোন একটি মানববিহীন উড়ন্ত যন্ত্র (UAV – Unmanned Aerial Vehicle), যেটি রিমোট বা প্রোগ্রামিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে থাকে ক্যামেরা, জিপিএস, সেন্সর, এবং স্প্রে মেশিনের মতো বিভিন্ন ডিভাইস। কৃষিক্ষেত্রে ড্রোন ব্যবহার করা হয় জমির পরিদর্শন, সার ও কীটনাশক ছিটানো, বীজ বপন, এবং ফসল পর্যবেক্ষণের জন্য।

বাংলাদেশের কৃষিতে ড্রোন প্রযুক্তির বর্তমান ব্যবহার
- জমি জরিপ ও মানচিত্র তৈরি: স্যাটেলাইটের মতো ড্রোন কৃষিজমির ম্যাপ তৈরি করে দেয়।
- সার ও কীটনাশক স্প্রে: নির্দিষ্ট পরিমাণে সঠিক জায়গায় স্প্রে করে কৃষকের খরচ কমায়।
- ফসল পর্যবেক্ষণ: ফসলের স্বাস্থ্য বিশ্লেষণ করে রোগ বা পোকামাকড়ের আক্রমণ শনাক্ত করা যায়।
- বীজ বপন: নির্ধারিত অঞ্চলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বীজ ছিটানো সম্ভব।
ড্রোন ব্যবহার করে কীভাবে খরচ ও সময় কমানো যায়?
একজন কৃষক সাধারণত এক একর জমিতে স্প্রে করতে প্রায় ৫-৬ ঘণ্টা সময় নেন এবং অনেক পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু ড্রোন ব্যবহার করলে এই কাজ মাত্র ১৫-২০ মিনিটে করা যায় এবং মানুষকে সরাসরি কীটনাশকের সংস্পর্শে আসতে হয় না।
“বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ড্রোন ব্যবহার করে সারের খরচ ৩০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব।”
ড্রোন ব্যবহারের সুবিধাসমূহ
- দ্রুত এবং নিখুঁত স্প্রে করার সুবিধা
- শ্রম খরচ কম
- মানবসৃষ্ট ভুল কমে যায়
- উচ্চ উৎপাদন
- সাম্প্রতিক আবহাওয়াভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ

ড্রোন ব্যবহারে চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা
যদিও ড্রোন প্রযুক্তি কৃষিতে বিপ্লব এনেছে, তবে কিছু চ্যালেঞ্জ এখনো বিদ্যমান:
- প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল ঘাটতি
- ড্রোন কেনা ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ
- আইনি ও নিরাপত্তা বিষয়ক সীমাবদ্ধতা
- গ্রামাঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ দুর্বল
উল্লেখযোগ্য তথ্য: বাংলাদেশ সরকার কৃষি খাতে প্রযুক্তির প্রসারের জন্য AgriTech 2041 Vision নামে একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যার আওতায় ড্রোন ও সেন্সর প্রযুক্তির ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সম্ভাবনা
বিশ্বব্যাপী কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়নের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও ড্রোন প্রযুক্তির ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। ভবিষ্যতে প্রত্যেকটি ইউনিয়নে একটি করে “ড্রোন কৃষি সেবা কেন্দ্র” গড়ে তোলা যেতে পারে, যেখানে স্থানীয় কৃষকরা কম খরচে ড্রোন ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করতে পারবেন।
সরকার ও বেসরকারি খাতের ভূমিকা
- ড্রোন আমদানিতে কর ছাড়
- স্থানীয়ভাবে ড্রোন উৎপাদনে উৎসাহ
- কৃষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
- সহজ লোন ও ভর্তুকি প্রদান
বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে ড্রোন প্রযুক্তির আগমন একটি নতুন বিপ্লবের সূচনা করেছে। এটি কৃষিকে আরও আধুনিক, দক্ষ, এবং টেকসই করে তুলতে সহায়ক হচ্ছে। তবে এর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তা, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং কৃষকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন।