ভূমিকা
ক্যাপসিকাম, যা মিষ্টি মরিচ বা বেল পেপার নামেও পরিচিত, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জনপ্রিয় সবজি। এটি শুধু খেতে সুস্বাদু নয়, বরং পুষ্টিগুণেও ভরপুর। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ক্যাপসিকাম চাষ বেশ লাভজনক হতে পারে। সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে কৃষকরা ভালো ফলন পেতে পারেন।
আবহাওয়া ও মাটি
ক্যাপসিকাম চাষের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু উপযুক্ত। সাধারণত, ২১-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা এর জন্য সর্বোত্তম।
মাটির ধরন
- উর্বর, দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ মাটি উপযুক্ত।
- মাটির pH ৬.০-৬.৫ হলে ভালো হয়।
- জলনিকাশের ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে।
চারা উৎপাদন ও রোপণ
ক্যাপসিকাম বীজ থেকে চারা তৈরি করে জমিতে রোপণ করা হয়।
বীজতলা প্রস্তুতি
- উঁচু বেড তৈরি করতে হবে।
- প্রতি বর্গমিটারে ২ গ্রাম হারে বীজ বপন করতে হবে।
- ৭-১০ দিনের মধ্যে চারা গজাবে।
- ৩০-৪০ দিনের চারা রোপণের উপযুক্ত।
জমি প্রস্তুতি ও চারা রোপণ
- ৩-৪ বার চাষ দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে।
- জমিতে জৈব সার মিশিয়ে নিতে হবে।
- সারিবদ্ধভাবে ৪৫-৬০ সেমি দূরত্বে চারা রোপণ করতে হবে।
সার প্রয়োগ
- গোবর সার: ১০-১৫ টন/হেক্টর।
- ইউরিয়া: ২৫০ কেজি/হেক্টর।
- টিএসপি: ২০০ কেজি/হেক্টর।
- এমওপি: ১৫০ কেজি/হেক্টর।

সেচ ও আগাছা ব্যবস্থাপনা
- সপ্তাহে ১-২ বার সেচ দেওয়া প্রয়োজন।
- আগাছা নিয়মিত পরিষ্কার করা উচিত।
- মালচিং করলে আগাছা কম জন্মাবে।
রোগ ও পোকা দমন
ক্যাপসিকাম গাছে কিছু সাধারণ রোগ ও পোকামাকড় আক্রমণ করে।
সাধারণ রোগ
- ব্লাইট: কপার অক্সিক্লোরাইড স্প্রে করা যেতে পারে।
- পাউডারি মিলডিউ: সালফার স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
সাধারণ পোকা
- সাদা মাছি: হলুদ আঠালো ফাঁদ ব্যবহার করতে হবে।
- থ্রিপস: জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করলে ভালো হয়।
ফুল ও ফলন
- রোপণের ৪৫-৬০ দিনের মধ্যে ফুল আসে।
- পরাগায়ন ভালো হলে ফলন বেশি হয়।
- এক গাছে ৮-১০টি ফল ধরে।

সংগ্রহ ও সংরক্ষণ
- ফুল আসার ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়।
- হাতে বা কাঁচি দিয়ে কাটতে হবে।
- ৭-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সংরক্ষণ করলে বেশি দিন টিকে থাকে।
লাভজনক দিক
- ক্যাপসিকাম বাজারে উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়।
- হাইব্রিড জাত চাষ করলে বেশি লাভ হয়।
- রফতানির সুযোগ থাকলে আরও লাভবান হওয়া যায়।
উপসংহার
সঠিক পরিচর্যা ও আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করলে ক্যাপসিকাম চাষ অত্যন্ত লাভজনক হতে পারে। কৃষকদের জন্য এটি একটি সম্ভাবনাময় ফসল।