কাজু বাদাম চাষ: সম্পূর্ণ গাইড ২০২৫
কাজু বাদাম (Cashew Nut) হল একটি লাভজনক ও জনপ্রিয় বাণিজ্যিক ফসল। বাংলাদেশে এর চাষ সম্প্রতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই গাইডে আমরা কাজু চাষের সব ধাপ, মাটি নির্বাচন থেকে শুরু করে চারা রোপণ, পরিচর্যা, রোগ ও কীট নিয়ন্ত্রণ, এবং বাজারজাতকরণ পর্যন্ত বিস্তারিত আলোচনা করব।
অধ্যায় ১: কাজু বাদামের পরিচিতি
কাজু বাদাম একটি গ্রীষ্মকালীন ফল এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Anacardium occidentale. এটি মূলত ভারত, ব্রাজিল এবং আফ্রিকার উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলে জন্মেছে। কাজুর ফল দুই ধরনের হয় – বাদাম এবং ফলের মাংস। কাজু বাদাম চাষে মূলত বাদামের উৎপাদনকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কাজু বাদামের বৈশিষ্ট্য
- গাছ উচ্চতা: ১২–১৫ মিটার
- ফলনকাল: চারা রোপণের পর ৩–৫ বছরে ফল দেয়
- মাটি: বেলে দোআঁশযুক্ত, জল নিষ্কাশন সহজ
- জলবায়ু: উষ্ণমণ্ডলীয়, ২০–৩৫°C তাপমাত্রা উপযুক্ত

অধ্যায় ২: কাজু চাষের জন্য উপযুক্ত মাটি ও জলবায়ু
কাজু চাষের জন্য মাটি এবং জলবায়ু খুব গুরুত্বপূর্ণ।
মাটি
- বেলে দোআঁশযুক্ত মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত।
- PH মান ৫.৫–৬.৫ থাকা প্রয়োজন।
- মাটির জল নিষ্কাশন সহজ হতে হবে, কারণ কাজু পানি জমে থাকা মাটি সহ্য করতে পারে না।
জলবায়ু
- উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ু সবচেয়ে ভালো।
- বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১,০০০–২,০০০ মিমি যথেষ্ট।
- শীতকাল খুব ঠান্ডা হলে গাছের বৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ে।
অধ্যায় ৩: কাজু চারা প্রস্তুতি ও রোপণ
চারা নির্বাচন
- সুস্থ, রোগমুক্ত চারা বেছে নিন।
- চারা ৬–১২ মাস বয়সী হতে হবে।
- প্রতি চারা ৪০–৫০ সেমি উচ্চতা থাকা ভালো।
রোপণের পদ্ধতি
- গর্তের মাপ: ৬০ x ৬০ x ৬০ সেমি
- প্রতি গর্তে ১টি চারা রোপণ করা হবে।
- রোপণের আগে মাটিতে জৈব সার মিশিয়ে দিন।
সার ব্যবহারের পরামর্শ
| সার | পরিমাণ (প্রতি গাছ) | মন্তব্য |
|---|---|---|
| জৈব সার | ১০–১৫ কেজি | গর্তে মেশানো |
| নাইট্রোজেন | ১০০ গ্রাম | চারা রোপণের পর ১ম বছর |
| ফসফরাস | ৫০ গ্রাম | প্রথম ৩ বছর প্রতি বছর |
অধ্যায় ৪: কাজু গাছের পরিচর্যা

সেচ
কাজু গাছ drought-tolerant হলেও সঠিক সময়ে সেচ দিলে ফলন ভালো হয়। বর্ষাকালে অতিরিক্ত পানি ক্ষতিকর।
ছাঁটাই
- প্রথম বছর লম্বা কান্ড ছাঁটাই করা উচিত নয়।
- ৩–৪ বছর পর গাছের তাজা শাখা ছাঁটাই করা যায়।
- গাছের আকার নিয়ন্ত্রণ এবং রোগ কমাতে ছাঁটাই সহায়ক।
জৈব ও রাসায়নিক সার
চারা থেকে ৫ বছর পর প্রতি বছর নিয়মিত নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশ সার প্রয়োগ করলে ফলন বৃদ্ধি পায়।

অধ্যায় ৫: কাজু গাছের রোগ ও কীটপতঙ্গ
রোগ
- ফাঙ্গাল রোগ: পাতার দাগ ও কুঁড়ি পচা
- ব্যাকটেরিয়াল দাগ
- রোগ প্রতিরোধে সঠিক ছাঁটাই ও সার ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন
কীটপতঙ্গ
- কাজু বগ
- পাতার পোকারা
- নিয়ন্ত্রণের জন্য বায়ো-পেস্টিসাইড ব্যবহার করা যায়
অধ্যায় ৬: কাজু গাছের ফসল তোলা ও প্রক্রিয়াজাতকরণ

ফসল তোলা
- চারা রোপণের ৩–৫ বছরে প্রথম ফলন শুরু হয়।
- ফল সম্পূর্ণ পরিপক্ক হলে ঝরে পড়ে।
- ফল সংগ্রহে সাবধানতা অবলম্বন করুন কারণ বাদাম কড়া রেশার কারণে ত্বকে সমস্যা হতে পারে।
প্রক্রিয়াজাতকরণ
কাজু বাদাম শুকানো, ছিঁড়া এবং রোস্টিং করে বাজারজাত করা হয়। বাংলাদেশে কাজুর বাজার সম্প্রতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
অধ্যায় ৭: বাজারজাতকরণ ও লাভ
কাজু বাদামের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে এর চাহিদা আছে। বাজারজাতকরণের সময় মূল, মান এবং প্যাকেজিং গুরুত্বপূর্ণ।
লাভের সম্ভাবনা
- প্রতি গাছে গড়ে ২০–৩০ কেজি বাদাম উৎপাদন সম্ভব।
- মূল্য বাজারে প্রতি কেজি ৮০০–১,২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
- সঠিক পরিচর্যা এবং সময়মতো ফসল তোলার মাধ্যমে লাভ নিশ্চিত করা যায়।
উপসংহার
কাজু বাদাম চাষ একটি লাভজনক এবং দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ। সঠিক মাটি, চারা নির্বাচন, পরিচর্যা, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও বাজারজাতকরণের মাধ্যমে চাষীরা ভালো মুনাফা অর্জন করতে পারেন। বাংলাদেশের উষ্ণমণ্ডলীয় জলবায়ুতে কাজু চাষ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়।
