আম হবে বিষমুক্ত ও নিরাপদ ফ্রট ব্যাগিং প্রযুক্তিঃ আম হবে নিরাপদ ও খরচ কম হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে ফ্রট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ। এ পদ্ধতি আমাদের রাজশাহীতে পুরোপুরি চালু হলে ভোক্তারা পাবে ১০০ ভাগ নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম। তবে, মানহীন ব্যাগ ও ব্যাগিংয়ের সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার না জানলে বিপরীত হতে পারে বলে মনে করে মত বিশেষজ্ঞদের। ফ্রট ব্যাগিং পদ্ধতিতে আম চাষ করা।
ফ্রট ব্যাগিং প্রযুক্তিঃ ফ্রট ব্যাগিং প্রযুক্তি বলতে গাছে ফল থাকা অবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে বা বয়সে বিশেষ ধরনের ব্যাগ দ্বারা ফলকে আবৃত করাকে বুঝায়। ব্যাগিং করার পর থেকে এই ফল সংগ্রহ করা আগ পর্যন্ত ব্যাগটি গাছেই ফলের সাথে লাগানো অবস্তাই থাকবে । তবে এই ব্যাগ বিভিন্ন ধরনের ফলের জন্য বিভিন্ন রং এবং আকারের ছোট বড় হয়ে থাকে।গাছের আমের ব্যাগিং করার জন্য সাধারন দুই ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করা হয় ।যেমন ব্যাগিং ১) রঙিন কালার আমের জন্য যেমন সাধারন সাদা কালার ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। ২) অন্যান্য জাতের আমের জন্য বাদামি কালার রংএর ব্যাগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
ফ্রট ব্যাগিং এর প্রয়োজনীয়তাঃ আমের সঠিক ফলন নিশ্চিত করার জন্য বর্তমান সময় বালাইনাশকের ব্যবহার উদ্বেগ সৃষ্টি করা হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাত্রা অতিরিক্ত স্প্রে যেমন মানুষের জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তেমনি আমের উৎপাদন ব্যয় এর হার বেশি হয়। এই অবস্থায় আমে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হলে ফলে বালাইনাশকের ব্যবহার ও খরচ অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হয় । গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যে সঠিক পদ্ধতি গবেষনা করে ফল গাছে থাকা অবস্থায় একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রয়ক করা বা মেনে ব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করালে নিম্নোক্ত ১০০ ভাগ সুবিধা ও ভালো সমূহ আম পাওয়া যায়।
যেমনঃআমের মাছি পোকার আক্রমণ প্রাই ১০০% দমন হয় এবং সঠিক সময়ে ব্যাগিং করলে ফল ছিদ্রকারী পোকা ও অনান্নো পোকা দমন করা সম্ভব।আমের গায়ে কালো রঙ এর ইস্পট বা দাগ পড়ে না।
আমের রঙ খুবই উজ্জ্বল হয় ও অনেক সুন্দর , ফলে ক্রেতা আকৃষ্ট হয় পরে।
ব্যাগিং করার কারণে বালাইনাশকের ব্যবহার শতকরা ৬০-৭০ ভাগ কমে যায় তাতে দেখা যাবে খরচ অনেক টাই কমে আসবে তাই আম পাড়ার সময় নির্গত কষ থেকে ফলকে রক্ষা করে। ব্যাগিং করার ফলে ।
আমের বাহিরের অংশে বিভিন্ন ধরনের আঘাত আসে যেমন ফল ফেটে যাওয়া, কাঠবিড়ালী, বাদুর, পাখির আক্রমণ, প্রখর সূর্যালোক হতে রক্ষা করা যায় ১০০ ভাগ।
ব্যাগিং করা আমের গুনগত মান বজায় থাকে এবং স্বাদেও তেমন ব্যাগিং করা আমের মতো হয় না কিছু পরিবর্তন হয়।
সর্বো উত্তম ব্যাগিং করা আম বিষমুক্ত, নিরাপদ রোগ ও পোকামুক্ত ফ্রেশ আম পাওয়া যাই । এবং আকর্ষণীয় রঙের হওয়ায় বাজার চাহিদা ও মূল্য অধিক বেশি পাওয়া যায় ফলে লাভ ভাল হয়ে থাকে।
ব্যাগিং করার উপযুক্ত সময় ও পদ্ধতিঃ সকল জাতের আমের জন্য ব্যাগিং করার সময় এক সময় নয়। যেমন বারি আম-১, বারি আম-২, বারি আম-৬, বারি আম-৭, খিরসা এবং ল্যাংড়া জাতের আমে ব্যাগিং করা হয় ৪০-৪৫ দিন বয়সের মধে গুটিতে। আমের অন্যান্য জাতগুলি যেমন বারি আম-৩, বারি আম-৪, বারি আম-৮, ফজলি ও আশ্বিনা জাতে আম ব্যাগিং করা হয় গুটির বয়স প্রাই ৬০-৬৫ দিন হলে। আমের গুটির আসা পরে প্রাকৃতিক আমের গুটি ঝরা বন্ধ হলে এবং ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ শুরু হওয়ার পূর্বেই ব্যাগিং করা পুরনো করে নিতে হবে। ব্যাগিং করার পূর্বে অবশ্যই ভালো কীটনাশক ও ছত্রাকনাশক নির্দেশিত মাত্রায় ভালো ভাবে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। আম গাছে মুকুল আসার পূর্বে আনুমানিক ১৫-২০ দিন আগে প্রথমবার, আমের মুকুল ১০-১৫ সেমি লম্বা হলে দ্বিতীয়বার এবং আম যখন মটর দানার মত গোল হবে তখন তৃতীয়বার স্প্রে করতে হবে।
ব্যাগিং করার কিছু নিয়মকানুনঃব্যাগিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য কিছু নিয়ম ভালো করে অবশ্যই মেনে চলা জরুরী যেমনঃ
- নির্দিষ্ট বয়সের এবং দাগমুক্ত আমে ব্যাগিং করতে হয়। অনেকগুলো আম থাকলে প্রথমেই ফোল গুলো পাতলা করে নিতে হবে । এরপর সবচেয়ে ভালো, দাগমুক্ত ও প্রেষ ফল প্রতি বোটাই একটি অথবা দুটি আমে ব্যাগিং করতে পারবে । তবে বড় জাতের আমের ক্ষেত্রে প্রতি বোটাই একটি ফল রাখা উচিত । বোঁটায় মরা ও শুকনা আম, উপপত্র, মুকুলের অংশবিশেষ কিছু লেগে থাকলে তা পরিষ্কার করে ব্যাগিং করতে হবে।
- ব্যাগিং করার পূর্বে আমের গুটিতে কীটনাশক ও একটি ছত্রাকনাশক দুটি একত্রে মিশিয়ে ভালো করে স্প্রে করতে হবে। এরপর আমগুলো স্প্রে কীটনাশক করা আম শুকনো অবস্তাই ব্যাগিং আরম্ভ করে দিতে হবে । রৌদ্রোজ্জ্বল দিন দেখে ব্যাগিং করা উত্তম ।
- ব্যাগের উপরের অংশ দুই পার্শ্ব হতে ভাঁজ করতে করতে মাঝ বরাবর আনতে হবে। এরপর সংযুক্ত তার দ্বারা ভালোভাবে মুড়িয়ে দিতে হবে যেন কোন অবস্থাতেই পানি, পিঁপড়া, পোকা ইত্যাদি প্রবেশ করতে না পারে।
- আমের জন্য দুই ধরনের ব্যাগ ব্যবহার করা হয় থাকে । ১) রঙিন কালার আমের জন্য যেমন সাধারন সাদা কালার ব্যাগ ব্যবহার করা হয়। ২) অন্যান্য জাতের আমের জন্য বাদামি কালার রংএর ব্যাগ ব্যবহার করা হয়ে থাকে ।
- অপেক্ষাকৃত ছোটো খাটো ও মাঝারী উচ্চতা সম্পন্ন আম গাছে ব্যাগিং করা ভালো। তবে গাছ বড় বা ৮-১৪ ফুট লম্বা হলে মই ব্যবহার করতে হবে।
- সাধারান্ত পলিথিন ব্যাগ দিয়ে ব্যাগিং করলে ব্যাগের নিচের অংশ দিকে বা দু’পাশে কৌণিকভাবে কেটে দিতে হয় জাতে পলিথিন ব্যাগ এর পানি নিচে পোরে যাই।
ব্যাগিং প্রযুক্তির উৎপাদিত আম যেভাবে খাওয়ার নিয়মঃ গাছ থেকে ব্যাগিং করা উৎপাদিত আম সংগ্রহ করার পোর সাথে সাথে খাওয়া যাবে না। তাই গাছ থাকে পাকা আম সংগ্রহের সাথে সাথে বা ২/৩ দিনের মধ্যে খেলে আম টি কম মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। এই আমগুলো যতো বেশি ঘরে রেখে খাওয়া যাবে ততই মিষ্টি ও সুস্বাদু বাড়বে। তাই সাধারণভাবে দেখা গেছে যে, বিভিন্ন জাতভেদে ব্যাগিংকরা আম সংগ্রহের ৭-৮ দিন পর ভালোভাবে নরম হয় এবং খেতে সুস্বাদু ও মিষ্টি হয়।